‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’– পঙক্তি মালার রচয়িতা প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই। একাকিত্ব, প্রেম আর সব যুদ্ধ সাঙ্গ করে চলে গেলেন অনন্তলোকে। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বাথরুমে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় তার। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিএসএমএমইউ পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে কবিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার আগেই তার মৃত্যু হয়। উনাকে কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে আসেন মৃত অবস্থায়। উনারা পরিবারের সদস্য নন, উনার হোস্টেলের প্রতিবেশী হতে পারে। বিষয়টি আমি শাহবাগ থানার ওসিকে জানিয়েছি। সে অনুযায়ী উনারা দ্রুত এসে প্রয়োজনীয় ফরমালিটিজ সারবেন।’
মৃত্যুকালে অকৃতদার কবির বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জীবনের শেষ দিনগুলো তার কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে। কর্মজীবনে খুব বেশি কাজ নেই হেলাল হাফিজের। সমালোচকদের বিচারে অবস্থান যেখানেই হোক না কেন, জনপ্রিয়তার বিচারে বাংলাদেশের শীর্ষ কবিদের সারিতেই থাকবে তার নাম। মৃত্যুকালে অকৃতদার কবির বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জীবনের শেষ দিনগুলো তার কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে।
হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর, নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে ওঠে মিছিলের স্লোগান।
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।