বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে। তিনি কাতারের আমিরের পাঠানো একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেন। এটি তার চিকিৎসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি দেশের রাজনীতি ও জনমনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে পথে পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছিল। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের নেত্রীকে বিদায় জানান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বাসভবন থেকে রওনা হওয়ার পর সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডাম বাসা থেকে রওনা হয়েছেন। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীসহ সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।’
বিএনপি জানায়, ঢাকা থেকে খালেদা জিয়া প্রথমে যাবেন ইংল্যান্ডে। সেখানে তাঁকে ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর অ্যামেরিকার মেরিল্যান্ডে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে। গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। লন্ডনে ছেলের বউ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা জারনাজ রহমান খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, মা-ছেলের দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত এই সাক্ষাতে দেশ, দল ছাড়াও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হতে পারে।
বিএনপির চেয়ারপারসন সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন। এরপর তাঁর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তাঁর মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।