ইউনূস জমানায় বাংলাদেশে পুলিশের সারদা নাটকের শেষ কোথায়?

বাংলাদেশে সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বিসিএস উত্তীর্ণ ৬৬ জন এএসপি চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায়। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের গন্ধ খুঁজছে সরকার। ঠুনকো অযুহাতে জারি করা হচ্ছে একের পর এক নোটিশ।

আইনশৃঙ্খলার করুণ অবস্থা, প্রকাশ্যে হত্যা, দল বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, লুটপাট, ট্রেনে ডাকাতি ঘটনাগুলো আফ্রিকাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যস্ত অন্য কাজে।

পুলিশে চাকরি পাওয়ার পরও ঠুনকো অযুহাতে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তিন শতাধিক এসআইকে। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার বা এএসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশিক্ষণ শেষেও চলছে একই ধারাবাহিকতা।

যাদের দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত, তাকে বাদ দিতে আনা হচ্ছে হাস্যকর সব অভিযোগ।

এবার ৪০ তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচ পড়েছে অনিশ্চয়তায়। অথচ একই ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা, এরপর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ করে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হবে, এ সবার কাছে ছিল ভাবনারও অতীত।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০ তম বিসিএস ক্যাডারের ৬৬ জন এএসপির ১ বছরের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে প্রায় মাস তিনেক আগে। কিন্তু ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তাদের পাসিং আউট ইভেন্ট স্থগিত করা হয়।

গত ২০ অক্টোবর ৪০ তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের পাসিং আউট নির্ধারিত ছিল। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের এক ফেইসবুক পোস্টেই বন্ধ হয়ে যায় সেটি। স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়, ৪০ বিসিএস পুলিশ ব্যাচের সবাই ছাত্রলীগ এবং গোপালগঞ্জের।

এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এএসপিদের ভেরিফিকেশন করা হয় এবং প্রায় ২ মাস এই পাসিং আউট আটকে থাকে, যা নজিরবিহীন।

অথচ ২০ অক্টোবর পাসিং আউট উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব ও বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান এর বাণী সংবলিত স্যুভেনির অভীক-৪০ও প্রকাশ করা হয়।

যাচাই বাছাই শেষে ২৪ নভেম্বর আবার পাসিং আউটের তারিখ দেওয়া হয়। তবে সেটিও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তবে ভেরিফিকেশনে ২৫ জনকে টার্গেট করা হয়। তাদেরকে নানা ঠুনকো অযুহাতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সরকারের তরফে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপালের হাতে এই তালিকা দেওয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের প্রভাবশালী কয়েকজন কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণরত এএসপিদের বাদ দেওয়ার জন্য আইজিপিকে চাপ দিচ্ছেন বলেও একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছে।

তবে কারণ দর্শানোর যে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে, সেটি পুলিশ একাডেমিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে নয়। এতে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে সেটি ২৬ নভেম্বরের। আর কারণ দর্শানো নোটিস জারি করা হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর।

সেদিন প্রশিক্ষণে থাকা এএসপিদের বিরুদ্ধে এলোমেলোভাবে হাঁটার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু পুলিশ একাডেমিতে শৃঙ্খলাভঙ্গ জনিত কোনো ঘটনা ঘটলে সেটি দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করা হয়। একদিন বা দুইদিনের মধ্যেই নোটিশ করা হয় এবং ইডি বা অতিরিক্ত ড্রিল করানো হয়। সে হিসেবে ২৬ নভেম্বরে কিছু ঘটে থাকলেও সেটার নিষ্পত্তি নভেম্বরের মধ্যেই হওয়ার কথা।

আবার ২৬ নভেম্বরের ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে ১১ ডিসেম্বর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জরুরি তলব করে পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপালকে ঢাকায় ডেকে নেয়া হয়। প্রিন্সিপাল ছুটি শেষে ১৫ ডিসেম্বর একাডেমিতে ফিরে আসেন এবং এরপর শোকজ লেটার প্রস্তুত করে রাতে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়।

সর্বশেষ এই ২৫ জন থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা আট জনে নেমেছে। তাদের মধ্যে একজন আবার প্রশিক্ষণের সময় রেকর্ড সংখ্যক পদক পেয়েছেন।

২০০১ এবং ২০০৩ সালেও ২০ ও ২১ তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচে একইভাবে পাসিং আউটের আগে ট্রেনিংরত এএসপিদের বাদ দেওয়া হয়েছিল যা পুলিশের চেইন অফ কমান্ড ভাঙার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাদের সবাই পরে পুলিশে পদোন্নতি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন।

পুলিশের সাবেক এসপি ও বিএনপির পুলিশ সংস্কার কমিটির সদস্য আনসার উদ্দিন খান পাঠান যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তা অন্তর্বর্তী সরকারের আইনের শাসনের প্রতি অনীহাই তুলে ধরে।

তিনি এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘২৫ জনকে (এএসপি) প্রশিক্ষণ কালে মাঠের দৌড়ে পেছনে পড়া এবং ক্লাসে বিলম্বে আসার মত হাস্যকর কারণে শোকজ করা হয়। তাদের পরিণতি সহজে অনুমেয়।’

পুলিশ সদরদপ্তরের কর্মরত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা সবাই বোঝেন। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্নভাবে শৃঙ্খলাভঙ্গের আরও ক্ষেত্র তৈরি করা হবে।’

তবে যে অযুহাতে চাকরিচ্যুত করতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেসব যে ধোপে টেকে না, তা নোটিশের জবাবে তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন একটি অভিযোগে আইনে সাজা উল্লেখ আছে এক দিনের অতিরিক্ত ড্রিল, সেটি না করিয়ে চাকরিচ্যুত করলে তা বৈধ হবে না, সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাদের সূত্রে তথ্য মিলেছে, নতুন করে মসজিদে মিলাদ না পড়ার জন্য শোকজ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Hot this week

আওয়ামী লীগের হরতাল-অবরোধের ঘোষণা, প্রেস সচিবের কড়া বার্তা

আওয়ামী লীগ সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে...

অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় শুরু, এক বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। চলছে...

স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমর্থকদের সঙ্গে আইনসভা দিবসে যোগদানের আহ্বান

স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য সম্প্রদায়ের নেতারা সম্প্রতি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া শুনতে...

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, ১৮ জনের লাশ উদ্ধার

ওয়াশিংটন ডিসিতে  সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পোটোম্যাক নদীতে...

Topics

আওয়ামী লীগের হরতাল-অবরোধের ঘোষণা, প্রেস সচিবের কড়া বার্তা

আওয়ামী লীগ সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে...

অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় শুরু, এক বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। চলছে...

স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমর্থকদের সঙ্গে আইনসভা দিবসে যোগদানের আহ্বান

স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য সম্প্রদায়ের নেতারা সম্প্রতি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া শুনতে...

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, ১৮ জনের লাশ উদ্ধার

ওয়াশিংটন ডিসিতে  সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পোটোম্যাক নদীতে...

সরকারের উচিত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা: হাসনাত আব্দুল্লাহ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বুধবার তার ভেরিফাইড...

নাসার দুই নভোচারীকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে মাস্কের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে নাসার দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস...

৩০ বছরের ইতিহাসে টানা পাঁচ দিন গোলাগুলি হয়নি নিউইয়র্ক নগরে: এনওয়াইপিডি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আরোপের ফলে...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img