ফজলুল বারী, লেখক
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ইসকন নিধনের নামে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মূল কারিগর হচ্ছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। তাঁর নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে সনাতনী জোট এর নেতা চিন্ময় এর নামে আইন বহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রুজু করা হয়- যা নজিরবিহীন।
আইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে যে এরকম মামলার বাদী হবে পুলিশ এবং এ আইনে মামলা করার আগে সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পূর্বানুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। অথচ পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ এর নির্দেশনায় সম্পুর্ণ ভূল নিয়মে মামলাটি বি এন পির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকে বাদী করে মামলাটি রুজু করা হয়।
দেশে আইনের শাসন থাকলে এই মামলাটি আদালত প্রথম দিনেই বাতিল ঘোষণা করতো। এই মামলার আইনগত ত্রুটি অনুধাবন করে মহানগর বি এন পি বাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করে। অথচ পুলিশ কমিশনার এর নির্দেশনায় পুলিশ শুধু সনাতনী জোট এর নেতা চিন্ময়কে আসামী করে মামলা রুজু ও পরবর্তীতে গ্রেফতারই করে নি- এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে শতাধিক সংখ্যালঘু আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বিচারাংগনকে কলংকিত করা হয়েছে।
শরীয়তপুরের কুখ্যাত মুসলিম লীগ পরিবারের সদস্য হাসিব আজিজ আপাদমস্তক একজন দক্ষিণপন্হী রাজনীতিবিদ এর আচরণ করে থাকেন। ১৯৯৫ সালে বি এন পি আমলের বি সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিয়েও পুলিশ বিভাগে মুখরোচক আলোচনা প্রচলিত আছে। কথিত আছে তাঁর বাবা আই জি হওয়ার কারণে প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরির ব্যবস্হা করেন।
তাঁর বাবা প্রাক্তন আই জি আজিজুল হক ২০০৬ সালে ইয়াজউদ্দীন এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাজানো নির্বাচন করার জন্য যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছিলেন করা হয়, সেই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয় এই হাসিব আজিজ এর পিতা প্রাক্তন আই জি আজিজুল হক। যদিও গণ আন্দোলনের মুখে সে নির্বাচন বাতিল হলে আজিজুল হক বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে রাতের আধারে দেশত্যাগ করেন বলে জনশ্রুতি আছে। এর আগে আই জি হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় দূর্নীতির দায়ে মেয়াদ পূর্তির আগেই তাকে অপসারণ করা হয়েছিল – যা পুলিশ বাহিনীতে অতীতে কখনো ঘটে নি।
হাসিব আজিজ পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে আওয়ামী লীগ নিধন এর মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের মহানগর এর এম পি, সিনিয়র লিডার, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিশেষ নির্দেশনা জারী করেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্লট সাজিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজরে আসাই তাঁর মূল লক্ষ্য বলে অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন।
তাঁর আসল টার্গেট আই জি হওয়া। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে এবার চট্টগ্রাম মহানগরীর পুলিশ কমিশনার হয়েই সরকারের নজরে আসার জন্য আওয়ামী লীগ নিধনের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন। সর্বশেষ তাঁর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিধি ও আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে সনাতনী জোট এর নেতা চিন্ময় দাস এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রুজু ও পরবর্তীতে তাঁকে গ্রেফতার করার মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে ‘এথনিক ক্লিনজিং’এর নামে সংখ্যালঘু বিনাশের ষড়যন্ত্রে মেতেছেন এই হাসিব আজিজ।
এ পরিকল্পনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসিড হামলার প্লট সাজিয়ে হাজারী গলির হিন্দু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু এবং আসামি গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য – চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৫% সংখ্যালঘু ভোটার- যারা জাতীয় নির্বাচনে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা রাখেন- তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করা। এ লক্ষ্যে তিনি অতিরিক্ত আই জি পি হিসেবে প্রমোশনও নিচ্ছেন না!
তাঁর ব্যাচের তার সিরিয়ালের পরবর্তী অফিসারদের কয়েকজনের অতিরিক্ত আই জি হিসেবে প্রমোশন হলেও হাসিব আজিজ সরকারের নীতিনির্ধারকদের জানিয়ে দিয়েছেন – তাঁর মিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আপাতত প্রমোশন চান না।
একটি বিশেষ মিশন নিয়ে আসা পুলিশ কমিশনারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চলছে চট্টগ্রাম শহরে কানাঘুষা। দীর্ঘদিনের প্রণয়ের কথা মহানগরীর পুলিশ সদস্যদের মুখে মুখে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কর্মরত থাকার সময় ঐ অফিসারকে নিয়ে মুখরোচক কাহিনী তখন ঢাকার পুলিশ অঙ্গনে চাউর হয়েছিল। সেই অফিসারকে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে!
প্রশ্ন হচ্ছে এই কমিশনার বন্দর নগরের শান্ত পরিবেশ নষ্ট করার যে মিশন নিয়ে নেমেছেন – এর শেষ কোথায়? গোটা বিষয়টি এখন ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছে!