জন্মসূত্রে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড এ-ও জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ইউএস ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িতদের জন্য ক্ষমার দিকটিও নজর দেবেন।

গত নভেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের পর এনবিসির মিট দ্য প্রেসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ বিষয়ে  বলেন, ‘এই লোকগুলো নরকে বাস করছে।’ শুক্রবার নেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি অভিবাসন, জ্বালানি ও অর্থনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন।

পিতামাতা বা আত্মীয়দের সঙ্গে যেসব শিশুকে অ্যামেরিকায় নেয়া হয়েছে, ট্রাম্প বা তার দলের চোখে তারা অবৈধ অভিবাসী। এ বিষয়ে তিনি ডেমোক্রেটদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

এদিনেই তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি তার উস্কানিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা হয়। সেই দাঙ্গায় কমপক্ষে ৫ জন নিহত হন। দাঙ্গার সময় ক্যাপিটল হিলের ভিতরে অবস্থান করছিলেন তখনকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ বিপুল সংখ্যক কংগ্রেসম্যান।

কিন্তু ট্রাম্পের উস্কানিতে সেখানে দাঙ্গা চালায় তার সমর্থকরা। এ ঘটনায় বেশ কিছু সমর্থককে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরছেন। এ সময়ে তিনি দায়িত্ব নেয়ার দিনেই ওই ঘটনায় শাস্তি ভোগ করছেন এমন ব্যক্তিদের সাধারণ ক্ষমা করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন টাম্প।

গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবার কোনো টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। 

এদিকে ট্রাম্প এনবিসিকে বলেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান বাতিল করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বর্তমান আইন অনুয়াযী, বাবা-মা অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করলেও অ্যামেরিকায় জন্ম নেওয়া সব শিশু অ্যামেরিকান পাসপোর্ট পেয়ে থাকে।

জন্মগত নাগরিকত্বের বিধানটির জন্ম অ্যামেরিকান সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী থেকে। এ সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ও্যামেরিকায় ‘জন্মগ্রহণকারী সব ব্যক্তিই অ্যামেরিকার নাগরিক।’ ট্রাম্প এই নিয়ম বদলাতে চান বলে জানান। 

কানাডা, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার অনেকগুলো দেশসহ বিশ্বের প্রায় তিন ডজন দেশের ভূখণ্ডে জন্ম নিলে সরাসরি নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, অ্যামেরিকায় প্রায় ৪৪ লাখ শিশু অবৈধ অভিবাসী অভিভাবকদের সঙ্গে বসবাস করছে।

একটি সূত্র বলেছে, “এটি কোনো জরুরি সমস্যা নয়। এটি প্রথম বছরেই চূড়ান্ত করতে হবে এমন নয়। তারা জানে যে এটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে এবং তারা ধীরে ধীরে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।”

আইনি লড়াই অনিবার্য হলেও, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টি গ্রহণ করবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। যদি জন্মগত নাগরিকত্ব নিয়ে নিম্ন আদালতগুলোর মধ্যে মতবিরোধ না থাকে, তাহলে আদালত এটি গ্রহণে আগ্রহী নাও হতে পারে।

তবে যদি ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের জরুরি মামলার তালিকায় বিষয়টি নিয়ে আসে এবং নীতি বাস্তবায়নে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চায়, তাহলে আদালতকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

যদি সুপ্রিম কোর্ট পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে, তারা মূল সংবিধানগত প্রশ্ন এড়িয়ে আইন অনুযায়ী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, নথিবিহীন অভিবাসীদের পরিবারের সদস্যরা অ্যামেরিকান নাগরিক হলেও তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন ট্রাম্প।

সিএনএন আইনি বিশ্লেষক এবং জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল স্কুলের অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাদেক বলেন, “এটি খুব সম্ভব নয়, তবে এটি একটি বিকল্প হতে পারে।”  জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য ট্রাম্প দলের পরিকল্পনার বিপরীতে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিরোধী পক্ষ।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য ট্রাম্পের যুক্তি “চরমপন্থি ও অস্বাভাবিক,” যা “কখনোই কার্যকর হবে না।”

তিনি সিএনএনকে বলেন, “যদি কোনো অ্যামেরিকার নাগরিককে বিতাড়নের চেষ্টা করা হয়, আমরা অবশ্যই আদালতে মামলা করব।”

তবে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বজায় থাকার বিষয়ে আইনি বিশেষজ্ঞরা আত্মবিশ্বাসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here