মধ্য জার্মানির ম্যাগডেবার্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটে মানুষের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যান এক ব্যক্তি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ভিডিও দেখে আতকে উঠবেন যে কেউ।ভয়াবহ এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে কয়েকজনের। চাকায় পিষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। গাড়ি নিয়ে পালানোর সময় চালক সৌদি আরব বংশোদ্ভুত তালেব আল-আবদুল মোহসেনকে আটক করেন স্থানীয় পুলিশ। আর এই তালেব আল-আবদুল মোহসেনকে নিয়ে উঠে এসেছে নতুন তথ্য।
জার্মান পুলিশ বলছে, গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তালেব একটি গাড়ি নিয়ে জার্মানির সাক্সেন-আনহাল্ট রাজ্যের রাজধানী ম্যাগডেবার্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটে হামলা করেন। তিনি মার্কেটের ভেতর দিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। তাঁর গাড়ি দর্শনার্থীদের পিষে দেয়। তিনি প্রায় ৪০০ মিটার এভাবে গাড়ি চালিয়ে যান। এ ঘটনায় একটি ৯ বছরের শিশু ও ৪ নারী নিহত হন। আহত হন ২০৫ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাড়িটির পাশ থেকে তালেবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এত কিছুর পরও তালেবকে ‘হুমকি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে জার্মান গণমাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করা হচ্ছে।
জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তালেবের বয়স ৫০ বছর। তিনি সৌদি আরবের নাগরিক। ২০০৬ সালে তিনি সৌদি আরব থেকে জার্মানিতে আসেন। তিনি পেশায় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। মনোরোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে তিনি জার্মানিতে এসেছিলেন। পরে শরণার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেন। ২০১৬ সালে জার্মানি কর্তৃপক্ষ তাঁকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি কয়েক বছর ধরে ম্যাগডেবার্গ শহরের দক্ষিণের বার্নবার্গে বসবাস করে আসছিলেন। সেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সালাস ক্লিনিকে মনোচিকিৎসা ও সাইকোথেরাপির বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁর আচরণ সম্পর্কে জার্মানি কর্তৃপক্ষকে তিনবার সতর্ক করেছিল সৌদি আরব।
ডের স্পিগেলের প্রতিবেদন বলছে, তালেব ২০১৩ সালে জার্মানির মেকলেনবার্গ-ফরপোমেন রাজ্যের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। জার্মানিতে মনোরোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তখন তিনি টেলিফোনে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন যে তিনি এমন কিছু করবেন, যা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে। তিনি ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ম্যারাথনে হামলার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই হামলার দুদিন পর তিনি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে হুমকি দিয়েছিলেন।
পত্রিকাটি আরও বলেছে, হুমকি দিয়ে অপরাধ সংঘঠন ও জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট করার জন্য ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানির রোস্টক শহরের জেলা আদালত তালেবকে জরিমানা করেছিলেন। এই জরিমানার সাজায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর অফিসে ফোন করেছিলেন। তিনি আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের অক্টোবরে রোস্টক আদালতের রায় নিয়ে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তালেব। তিনি বিচারকদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। বিচারকদের বর্ণবাদী বলে অভিহিত করেছিলেন। বলেছিলেন, এই কারণে তিনি অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হবেন।