ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে অ্যামেরিকা থেকে অভিবাসী বিতারণ করতে কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি। ট্রাম্পের ওই কঠোর পদক্ষেপে নাগরিকত্ব হারাতে যাচ্ছেন লাখ লাখ ভারতীয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতি বাতিলের কার্যক্রম শুরু সংক্রান্ত আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার শপথ নেওয়ার পরে এ–সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। আদেশটি বাস্তবায়ন হলে আর কেউ অ্যামেরিকায় জন্মগ্রহণ করলে জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন না।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ট্রাম্প এ নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত বছর তিনি এ নীতিকে হাস্যকর বলেন। অথচ দেড় শ বছরের পুরোনো এই নীতি দেশটিতে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং নাগরিকত্বের শর্ত পূরণকারী সব ব্যক্তি দেশটির এবং যে অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন ওই রাজ্যের নাগরিক হবেন। ফলে শুধু নির্বাহী আদেশেই রাতারাতি এই নীতি পরিবর্তন হচ্ছে না বরং নীতি বাতিলে কার্যক্রম শুরু হলো।
পরিস্থিতি বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প একঘুঁয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে ফিরে আসবেন না। অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতি বাতিল করবেন। এতে ১৬ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাতে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে আদমশুমারি বিশ্লেষণ করে দেশটির অন্যতম জরিপ প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয়-অ্যামেরিকান বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ লাখের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে তারা আইনত অ্যামেরিকার নাগরিক। এই আইনটি চূড়ান্তভাবে বাতিল হলে এই ১৬ লাখ ভারতীয়-অ্যামেরিকান নাগরিকত্ব হারাবেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, এই নিয়ম বদলাতে হবে। যদি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়ম রাখা হয় তাহলে অভিবাসনপ্রত্যাশী অনেক পরিবারের সন্তানদের রেখে তাদের বাবা-মাকে ফেরত পাঠাতে হবে। আমি পরিবারগুলোকে আলাদা করতে চাই না। কাজেই পরিবার না ভাঙার একমাত্র উপায় হলো তাদের সবাইকে একসঙ্গে ফেরত পাঠানো।
উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব-গ্রিনকার্ড অর্জনের একটি সহজ এবং জনপ্রিয় পথ হচ্ছে ভূখণ্ডে সন্তান জন্মদান। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তাকে অ্যামেরিকার নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ওই শিশুর বয়স ১৮ পার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বড় করা এবং দেখাশোনা করার জন্য তার বাবা-মাকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
আর একবার বৈধ বসবাসের অনুমতি পেলে নাগরিকত্ব ও গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির পথও অনেক সহজ হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অ্যামেরিকার নাগরিকত্ব ভাগিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ ভারতীয়। তারা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ স্থানীয় রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছেন। এবার ট্রাম্পের কঠোর সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই সব ভারতীয়।
