ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার আশুলিয়ায় নবীনগরের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রদের হাঙ্গামার এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে বেদম পিটুনি দেয় সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশের সাভারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র সেনাবাহিনীর হাতে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছে। এলাকা ঘেরাও দিয়ে ‘ডাকাত’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে পেটানো হয়। 

1faa2c90 4dbf 4e2a af87 8eb0a2a67fe2 1

ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার সাভারে আশুলিয়া ধানার অধীনে নবীনগরের সেনা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে। স্থানীয়রা জানিয়েছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন বিপণি বিতানের একটি দোকানে হামলা করে ব্যবসায়ীদের পিটুনি দিয়েছিল ছাত্ররা। পরে ব্যবসায়ীরা সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রদের পাল্টা পিটুনি দেয়।

তবে এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কোনো অভিযোগ করেনি। এমনকি পিটুনি খেয়েও তারা কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না। পুলিশও কোনো কথা বলছে না, স্থানীয় সাংবাদিকরাও ‘ভয়ে’ সংবাদ প্রকাশ করছে না বলে জানিয়েছেন একজন সংবাদকর্মী।

কেন সংবাদ প্রকাশ করছেন না, কেউ নিষেধ করেছে কি?- এই প্রশ্নে  একটি জাতীয় দৈনিকের সাভার প্রতিনিধি বলেছেন, ‘কেউ নিষেধ করেনি, তবে এখানে একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। আর সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে, এটা ছোটখাট ঘটনা। তাই আমরা কেউ আগাইনি।

তবে সংবাদ প্রকাশ না করলেও নানাভাবে ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও এবং স্থিরচিত্র পাওয়া যাচ্ছে, যাতে দেখা যায় সেনা সদস্যরা ছাত্রদের বেশ ভালোভাবে পিটুনি দিয়েছে।

c619dde7 1277 407a 8dad c172e184e642

প্রত্যক্ষ্যদর্শীর বর্ণনায় ঘটনা

সেই প্রত্যক্ষ্যদর্শী জানান সাভারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা নিটারের একটি ক্যাম্পাস আছে। গত শনিবার নিটারের ২১-২২ সেশনের দুই শিক্ষার্থী রনক ও জিলানি সেনা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক সমিতির সহসভাপতি লিটনের দোকান রোকন ইলেকট্রনিকস থেকে আরজিবি লাইট কেনেন।

লাইটটি কেটে যাওয়ার পর সেই ছাত্র এসে একবার পাল্টে নেয়। কিন্তু পাল্টে দেওয়া সেই লাইটটি আবার নষ্ট হয়ে যায়।

তখন সেই ছাত্র আবার সেটি পাল্টাতে এলে দোকান কর্মচারী তাকে বলেন দোকান মালিককে ফোন দিতে। এ নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে কয়েকজন ছাত্র মিলে দোকানের শাটার নামিয়ে সেই কর্মচারী বেদম মারধর করে।

সেটি দেখে এগিয়ে আসেন অন্য দোকানিরা। তারা সেই ছাত্রদের আটকে ধরে পাল্টা মারধর করে। মার্কেটে ভেতর থেকে মারতে মারতে তারা দুই ছাত্রকে সবজি বাজার হয়ে মূল গেটে নিয়ে আসে। নিরাপত্তারক্ষীরাও তাদের মারতে থাকে।

রাত ৮ টা ২২ থেকে ৮টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

সেখান থেকে বের হয়ে ছাত্ররা ফোন দেয় অন্যদের। তখন ৬-৭ জন ছাত্র সেখানে যায় তাদের পক্ষে। ওই সময় ওই দুইজনকে আবারও মারধর করা হয়। তখন তারা অন্য ছাত্রদেরও খবর দেয়।

এরপর নিটারের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ খানেক ছাত্র শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।

পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে তারপর যাতে মামলা করে এটা ছাত্রদের পরামর্শ দেয় পুলিশ।

আরেকটি জাতীয় টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, তখন তখন পুরো ঘটনা দেখার জন্য সিসিটিভি কক্ষে যায় ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্রসহ বাকিরা। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা এক হয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ও মার্কেটে ডাকাত পড়েছে বলে জানায়।

তখন ২০ মাইল এলাকা থেকে নবীনগর এলাকা ঘেরাও করে সেনাবাহিনী। আনা হয় সাঁজোয়া যানও। সেনাবাহিনীর একটি দল ভেতরে ঢুকে। তখন ছাত্র ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

এরমধ্যেই কোনো সতর্কতা ছাড়া সেনাবাহিনীর ছাত্রদের লাঠিপেটা করে ও বেধড়ক মারধর করে। এতে ২০-৩০ জন আহত হয়। বেশিরভাগই মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এতে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়।

পিটুনি খেয়ে লিখিত অঙ্গীকার

এরপর রাত ১১টার দিকে সেনা শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা অন্য লোকজনকে বেছে বেছে বের করে মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেয় সেনাবাহিনী।

তখন সব ছাত্রকে ভেতরে ঢুকিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। সব ফোন রিসেট দেওয়া হয়, যাতে কোনো ছবি/ভিডিও না থাকে।

সবার চোখ ও হাত কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। রাত ৩টা পর্যন্ত তাদের ওভাবে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

এক পর্যায়ে প্রায় ১৪ জন ছাত্রকে আলাদা করে নিয়ে মারধর করা হয়। তাদের ডাকাত সাজানো হয়। এরপর নিটার শিক্ষক, প্রক্টর ও হল সুপাররা গেলেও তাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের সামনেই ছাত্রদের মারধর করা হয়।

রাত ৩টার পর আটক ছাত্রদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেয়, সব ছাত্ররা ইচ্ছা করে ডাকাতি করতে আসে হামলা করে।

ছাত্ররা ভবিষ্যতে এমন কিছু করবে না ও সেখানে আবার কিছু হলে নিটারের ছাত্ররা দায়ী থাকবে এমন লেখায়।

এরপর ছাত্রদের শিক্ষকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত ৪টা পর্যন্ত ছাত্ররা সেনা কমপ্লেক্সে আটকা ছিল।

ভিডিও দিয়ে যা বলল ব্যবসায়ীরা

রোববার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বক্তব্য দেওয়া হয়।

তাদের দাবি, নিটারের কিছু ছাত্র কর্মচারীর গায়ে হাত তোলে দোকান ভাঙচুর করলে ব্যবসায়ীরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে এবং মার্কেট সিকিউরিটি গার্ড দের সহযোগিতায় তাদেরকে মার্কেট থেকে বের করে দেওয়া হয়।

কিছু সময় পর ছাত্ররা দলে দলে আসতে থাকে এবং মার্কেটের প্রধান ফটকগুলোতে অবস্থান নিতে থাকে। তারা মার্কেট থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। ব্যবসায়ীরা দ্রুত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।

তখন সেনা শপিং কমপ্লেক্স মার্কেট উপ-কমিটির সভাপতি জনাব ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে কমিটির অন্যান্য মার্কেটের সামনের অফিস রুমে আলোচনা শুরু হয়। তখন ছাত্ররা হুমকি-ধমকি‌ দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে অফিস রুম ভাঙচুরের আশঙ্কা থেকে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মার্কেটের খোলা পার্কিংয়ে ডাকা হয়। মার্কেট উপ কমিটির সভাপতি জনাব ইকবাল হোসেন সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন এবং সুষ্ঠু বিচারের জন্য ছাত্রদের মধ্য থেকে পাঁচ অথবা ১০ জন প্রতিনিধি নির্ধারণ করার অনুরোধ করেন।

কিন্তু ছাত্ররা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যদের উপর চড়াও হয় এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে আবার মার্কেটের সামনে চলে যায়। পরে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধরে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে এবং মার্কেটের গেট ভাঙচুর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে।

আশুলিয়া থানা পুলিশ তখন আলোচনায় বসার চেষ্টা করলে ছাত্ররা তা প্রত্যাখ্যান করে।

পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য লাঠিচার্জ করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে বলেও ব্যবসায়ীরা বলেছে।

বক্তব্য নেই ছাত্রদের

কয়েক ঘণ্টা ধরে হাঙ্গামার পর বেদম পিটুনি খেয়েও ছাত্রদের তরফে এ ঘটনার কোনো বক্তব্য সামনে আসছে না।

সাভারের সেই সংবাদকর্মী বলেন, ‘আমাদের এক সহকর্মী ছাত্রদের একজনকে ফোন করেছিল। কিন্তু তারা বলছে, এ বিষয়ে তারা কোনো কথা বলবে না। তাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

ঘটনাস্থলে যাওয়া আশুলিয়া থানা পুলিশও এ বিষয়ে কিছু বলছে না। যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রদের তরফে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here