ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের তাণ্ডব এখনও অব্যাহত। ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। মাথা গোঁজার স্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে অনেককে। ভয়ঙ্কর এই দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার প্রশাসনের ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছে সুপার স্কুপার। প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দাদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই আকাশযান। যেন এক ‘সুপারম্যান’।
সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দাবানল নেভাতে দেশটিকে দুটি সুপার স্কুপার বিমান দিচ্ছে কানাডার সরকার। দাবানল বা বড় জায়াগাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আগুন নেভাতে আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে কার্যকর বিমান বলে বিবেচনা করা হয় সুপার স্কুপারকে।
এটি একটি উভচর বিমান। অর্থাৎ মাটি ও পানি–উভয় স্থান থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণে সক্ষম এটি। বিমানটির দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট এবং দুই পাখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৯৩ ফুট।
এর আরেক নাম সিএল-৪১৫। উড়তে থাকাবস্থায় এই যান পানিতে নেমে ১ হাজার ৬০০ গ্যালন পানি সংগ্রহ করতে পারে। এরপর সেই পানি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দাবানলে আক্রান্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। প্রয়োজনে ফোমের মাধ্যমে আগুনে স্প্রেও করতে পারে এই আকাশযান। বিধ্বংসী দাবানলে যখন আগুন নেভানোই প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে এই সুপার স্কুপার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
তবে দাবানলে কাজ করা একটি সুপার স্কুপার গ্রাউন্ডেড করে ফেলেছে প্রশাসন। এতে আরও ফুটো করে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তা করছে তারা। এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিমান ব্যবহার করে আগুন নেভালে জীবনের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে কীভাবে সুপার স্কুপার বিমানগুলো কাজ করে তা তুলে ধরা হয়েছে। এটি বালতি ও এয়ার ট্যাঙ্কার দিয়ে সজ্জিত একটি হেলিকপ্টারের চেয়েও আগুন নেভাতে অনেক বেশি কার্যকর। সুপার স্কুপার বিমানের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। তাই কাছাকাছি থাকা জলাশয় থেকে এই বিমান দ্রুত পানি সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে দিতে পারে। বিমানটিকে আগুন নেভানোর কাজে দ্রুত একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।
যে কোনো বড় জলাশয়ে নেমে মাত্র ১২ সেকেন্ডের মধ্যে সুপার স্কুপার তার পানির ট্যাংক পূর্ণ করতে পারে। ট্যাংকে পানি পূর্ণ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাতে মেশানো হয় বিশেষ ফোম বা ফেনা। আগুন নেভানোর জন্য এই ফেনামিশ্রিত পানি সাধারণ পানির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
ট্যাংকে পানি ভরার পর দাবানলের এলাকায় ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে উড়ে গিয়ে সেই পানি ফেলতে পারে বিমানটি। পানি ফেলার সময় ট্যাংকের চারটি দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। কানাডার সরকারের কাছ থেকে এর আগে দুটি সুপার স্কুপার বিমান নিয়েছিল আমেরিকা। তার মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কানাডার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল নেভানোর জন্য শিগগিরই আরও দুটি সুপার স্কুপার বিমান সেখানে পাঠানো হবে।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। বিমান দিয়ে পানি দিয়েও দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তীব্র বাতাসের কারণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন এলাকায়।
লস অ্যাঞ্জেলেসসহ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার যেসব এলাকা দাবানলে পুড়ছে, সেখানে আবারও তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এতে দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা। একই কথা বললেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জলবায়ু বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল সোয়াইনও।