আফজাল হোসেন, লেখক, অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, নির্মাতা
আমাদের একটা দেশ আছে। দেশটাকে নিয়ে আছে গর্ব। আছে অহঙ্কারও। যারা ভালো মানুষ, তারা শতরকমের অভাব অভিযোগ ও অসুবিধার মধ্যে থেকেও নিজে ভালো থাকার এবং অন্যদেরকেও ভালো রাখবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে।
নিজের সাথে অন্যদেরকেও যারা ভালো রাখবার চেষ্টা করে- তারা আসলে দেশটাকে মাথায় রেখে চলে এবং বাঁচে। তারা চায় দেশের সকল মানুষ ও দেশটা সবসময় ভালো থাকুক। এটাই দেশপ্রেম।
স্বার্থপর মানুষদের হিসাব আলাদা। নিজের লাভ লোকসান যারা বড় করে দেখে তারা মুখে যা, মনে তা নয়। নিজের চেয়ে আর কোনও কিছুকেই বড় করে দেখার সাধ্য থাকেনা তাদের।
তারা দেশ ভালোবাসার কথা বলবে- বেশি বেশি করে বলবে কারণ তাতে অনেকের মনোযোগ ফেরানো যায়। অন্যের চোখে সহজেই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ হয়ে ওঠা যায়। একথাও ঠিক, কম বলা মানুষদের চেয়ে বেশি বলা মানুষদের আমরা বেশি পাত্তা দেই, গুরুত্বপূর্ণ ভাবি।
দেশ নিয়ে, দেশপ্রেম নিয়ে যদি দিনরাত কথা বলে কেউ, আমরা ধরে নেই মানুষটা ভালো। মুগ্ধ হয়ে শুনি। বাহ বাহ বলি। ভালো মানুষ কি ভালোভাবে কথা বলে, নাকি বলে মন্দভাবে? দেশ নিয়ে, দেশপ্রেম বিষয়ে কথা বলতে হলে অসুন্দর করে কথা বলতে হয় কেনো- এটা নিয়ম হয়ে উঠলো কবে থেকে?
ভাষা সৌন্দর্যের কারণে, আবেগময়তার কারণে সেই কবেকার লেখা দেশভক্তির গানগুলো আজো পর্যন্ত মনে ক্রিয়াশীল। সেই একই মন দেশপ্রেমের নামে পরনিন্দা, পরচর্চ্চা, নানারকম অসভ্যতায় মুগ্ধ হওয়া শিখে গেলো কবে, কেমন করে?
আমরা নিজেদের বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, বিবেচক ভাবতে পছন্দ করি কিন্তু মনের বাস তো বোকার স্বর্গে নয়, নিজের মধ্যেই। সেই মনকে আমরা মন্দ কথা, অসভ্যতায়, অশালীনতায় মুগ্ধ হতে দেখি কেনো? মন তো দেখে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে কতজন যুক্তি তর্কের দফা রফা করে ফেলছে, উচিত অনুচিতের তোয়াক্কা করছেনা। মনের বোঝার ক্ষমতা আছে, মন জানে- সুন্দর কি করতে পারে আর অসুন্দরের সাধ্য কি।
দেশপ্রেম- এই এক শব্দের মধ্যে সমগ্র মানবজীবন ঢুকিয়ে দেয়া। ঢুকিয়ে দেয়া মানুষের প্রেম, বিশ্বাস, ধর্ম, মূল্যবোধ, চিন্তা চেতনা, আদর্শ, কর্তব্য, প্রতিবাদ প্রতিরোধ। জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে যা যা অতি প্রয়োজনীয় সবই চার অক্ষরের এ শব্দের সৌন্দর্য ও শক্তি।
অনায্য, অশালীন, অসুন্দর, অসভ্যতা যদি দায়িত্ব, দেশপ্রেমের উপাদান হয়- তার অবিরাম চর্চ্চা, অনুশীলনে একদিন মানুষের মাথায় শিং আর পিছন দিকে আড়াই/ তিন ফুটের একটা করে লেজ গজিয়ে যাবে। মানুষের পক্ষে আর মানুষ হয়ে টিকে থাকা সম্ভব হবেনা।