বাগেরহাটের আকাশ মণ্ডল, যিনি নিজের পরিচয় গোপন করে “ইরফান” নামে কার্গোজাহাজ এমভি আল বাখেরাতে চাকরি নিয়েছিলেন, তার এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ নিয়ে বেশ প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার পর সংশ্লিষ্ট জাহাজের মালিকও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গ্রেপ্তারের পর আকাশ মণ্ডল (ইরফান) অভিযোগ করেছেন যে, তাকে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তবে, জাহাজের মালিক এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট বলে দাবি করেছেন।
চাঁদপুরের মেঘনায় সংঘটিত ৭ খুনের মামলায় অন্যতম আসামি আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। তাকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার হাজতখানায় রাখা হয়েছে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।
মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তদন্ত করছে। নৌ পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা মো. কালাম খান তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আদালতের বিচারক মুহাম্মদ ফারহান সাদিক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চাঁদপুরের মেঘনায় সংঘটিত ৭ খুনের মামলার অন্যতম আসামি আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল মঙ্গলবার মধ্যরাতে বাগেরহাটের চিতলমারি থেকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা এই আসামির প্রকৃত পরিচয় জানা যায় গ্রেপ্তারের পর।
তার প্রকৃত নাম আকাশ মণ্ডল, বাবা জগদীশ মণ্ডল। তাদের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়।
কার্গোজাহাজ এমভি বাখেরার মালিক মাহবুব মোর্শেদ ডাবলু জানান, ইরফান নামে পরিচয় দিয়ে আকাশ মণ্ডল তার জাহাজে খালাসির পদে চাকরি নেন। তিনি আরও জানান, কেন এবং কী কারণে সে প্রকৃত নাম গোপন করেছিল, তা আমাদের কাছেও অজানা।
এদিকে, গতকাল আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান বিচারককে জানান, মানুষ ভুল করে। আমিও ভুল করেছি।
আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম জানান, ইরফান আদালতে স্বীকার করেছেন যে তিনি ৭ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে। নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদরের গোলাম কিবরিয়া (৬৫), একই এলাকার শেখ সবুজ (২৭), নড়াইলের মো. সালাহউদ্দিন (৪০), আমিনুর মুন্সি (৪১), মাগুরার সজিবুল ইসলাম (২৯), কিশোর মাজেদুল (১৬) এবং মুন্সিগঞ্জের রানা (২৮)।
নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাসিবুল আহসান জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথা ও মুখমণ্ডলে গুরুতর আঘাত করেই তাদের হত্যা করা হয়।
ঘটনার পরপরই জাহাজের মালিক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার সময় চট্টগ্রাম থেকে সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি যাচ্ছিল এমভি আল বাখেরা। মালিক পক্ষ জাহাজটি গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আদালতের অনুমতি চেয়েছে।
এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত করছে সিআইডি ও পিবিআই। পাশাপাশি শিল্পমন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটিও কাজ করছে।