মিজানুর রহমান খান, সাংবাদিক
বহু শহিদের রক্তের ওপর দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগেরই এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিলো না। সরাসরি আন্দোলনে তাদেরকে রাস্তায় দেখা যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এনজিওর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনফারেন্স রুমের চেয়ার থেকে ওঠে গিয়ে সরাসরি বসে পড়েছেন সচিবালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মন্ত্রণালয়ের কক্ষে।
যেসব শহীদের জীবনের বিনিময়ে আপনারা ক্ষমতার মসনদে গিয়ে বসলেন, এখনও পর্যন্ত তাদের নামের একটা তালিকা তৈরি করতে পারলেন না! এটা কি এতোই কঠিন কাজ? স্থানীয় পর্যায়ে যে প্রশাসন আছে, তাদেরকে নিজ নিজ এলাকার শহীদদের নাম পাঠাতে বললেই তো সেটা হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রকাশ করতে তো এতো সময় লাগার কথা না।
এই কাজটা নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার জন্য আলাদা একটা মন্ত্রণালয় অথবা দপ্তর করা যেত। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের বিন্দুমাত্র নজর নেই। আগ্রহ আছে কিনা জানি না। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় আছে, যার উপদেষ্টারা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, সেটাও টের পাওয়া যায় না। পাঁচ মাসের বেশি তো হয়ে গেলো। আর কত?
পতিত সরকারের লোকেরা ইতোমধ্যেই এসব মৃত্যু অস্বীকার করতে শুরু করেছে। এমনকি যারা মারা গেছে, তারা কিভাবে মারা গেছে সেনিয়েও তারা প্রশ্ন তুলছে। আরও সময় পার হলে কী অবস্থা হবে, সেটা কি বুঝতে পারছেন!
আন্দোলন করতে গিয়ে যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য দিতেও এতগুলো মাস লেগে গেলো আপনাদের? গুলি খেয়ে কি মানুষ এতো দিন বেঁচে থাকে? আর্থিক সাহায্য দিলে সেটা তো এখনই দেওয়া প্রয়োজন। মরে যাওয়ার পরে দিবেন?
নতুন টাকা ছাপাচ্ছেন, কিন্তু আহতদের অর্থ দিতে পারছেন না। ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাতে দেওলিয়া হয়ে না যায় সেজন্য তাদেরকে হাজার কোটি টাকা দিচ্ছেন, কিন্তু যাদের কারণে ক্ষমতার চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লেন, তাদের চিকিৎসার জন্য সামান্য কিছু অর্থ এখনও তাদের কাছে পৌঁছাতে পারলেন না!
ধরে নিলাম, তড়িঘড়ি করলে হয়তো পাঁচশ কী হাজার কোটি টাকা এদিক ওদিক হয়ে যেত। হলে হতো। এরকম নয় ছয় আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কিন্তু আহত বাচ্চা ছেলেগুলো তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য কিছু চিকিৎসা তো অন্তত পেতো।
এই দুটো কাজই তো করা দরকার ছিলো সবার আগে। ঢাকার বায়ু দূষণ ঠিক করার দায়িত্ব আপনাদের কে দিয়েছে? কে বলেছে এটা সেটা উদ্বোধন করতে? কে বলেছে সাংবাদিকের কার্ড বাতিল করতে? পাঁচ মাসেও যখন শহীদের তালিকা তৈরি করতে পারছেন না, পারছেন না আহতদের কাছে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অর্থ পৌঁছে দিতে, আপনারা কি রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজন করতে পারবেন? আসলেই?