শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে ভারতের। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে নয়াদিল্লি। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। এতে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের বর্তমান অবস্থাও তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার ভারতের উত্তর-পূর্বাংশকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করার হুমকি দেওয়ার পর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত। যদিও গত ডিসেম্বরের মাঝের দিকের এই মন্তব্যের বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত অতিক্রমকারী নদীগুলোতে নতুন ভাসমান সীমান্ত চৌকি তৈরি করেছে। বিএসএফের একটি সূত্র বলেছে- পানিপথ সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সীমান্ত এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল চালিয়ে যাচ্ছি। সেখানে অতিরিক্ত ভাসমান ফাঁড়ি অবশ্যই আমাদের সহায়তা করবে। এগুলো সময়ের প্রয়োজন।

সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। রাজধানীতে বিক্ষুব্ধ জনতার সহিংসতার আশঙ্কায় সামরিক বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন তিনি। পরে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছে ভারত। এ নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়। দিল্লি বলেছে, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের।

গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেছিলেন, বাংলাদেশে গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ২০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে; যা আগের বছরে ছিল ৩০২। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং এই পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করে বলেছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। টেলিগ্রাফকে তিনি বলেছেন- মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশিরা ভারত সরকারের অবস্থানে ক্ষুব্ধ।

উপমহাদেশীয় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কীভাবে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে, জানতে চাইলে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ভারতকে পুতুল শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভুলে যেতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে হবে। সমান মর্যাদা ও অধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here