বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও একাধিক উপদেষ্টার কাছে ‘বিরোধ নিষ্পত্তির নোটিশ’ পাঠিয়েছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম (এস আলম)। ওই নোটিশে ছয় মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে বিষয়টির সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাবেন তিনি।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সুলিভানের আইনজীবীরা এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। পত্রিকাটি এই নোটিশের অনুলিপি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার; এই ঘটনায় সেই টাকা ফেরত আনার প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, এই ক্ষতি আদায়ে সাইফুল আলম আন্তর্জাতিক আইনি প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। তবে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নন, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তাঁর এই প্রচেষ্টা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ২০০৪ সালের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির কথা বলা হয়েছে নোটিশে।
১৮ ডিসেম্বর এই নোটিশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এস আলমের পরিবার ২০১১ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তাঁরা দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সুলিভানের আইনজীবীরা এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। পত্রিকাটি এই নোটিশের অনুলিপি পেয়েছে।
কুইন ইমানুয়েলের নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড ও অবহেলার কারণে ‘বিনিয়োগকারীদের’ অর্থাৎ এস আলম গ্রুপের বিনিয়োগ ও সম্পদমূল্য সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এই অব্যাহত কর্মকাণ্ড ও অবহেলা বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় বিনিয়োগকারীদের অধিকার এবং বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন, যে কারণে সরকারের সঙ্গে তাদের মক্কেল সাইফুল আলমের বিরোধ তৈরি হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।
আহসান মনসুর আরও বলেছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এস আলম গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি পাচার করেছে। ওই সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম। বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির আলোকে তাঁর সুরক্ষা প্রাপ্য। এবার সুস্পষ্টভাবে বলা হলো, ছয় মাসের মধ্যে বিষয়টির সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাবেন সাইফুল আলম।