শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টালমাটাল হয়ে পড়েছে। ভারতকে আগেরমতো ছাড় দিচ্ছে না বাংলাদেশ। এই উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে দুই দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতেও। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের চৌকা সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশের বিজিবি ও ভারতের বিএসএফকে।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফ কাঁটা তারের বেড়া দিতে এসেছিল। বিজিবি তাতে বাধা দিয়েছে। সেই থেকে এই উত্তেজনার সূত্রপাত বলে জানা গেছে। সোমবার ও মঙ্গলবার বিকেলে দুই দফা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। উভয় পক্ষই সীমান্তে বতর্মানে সর্তকাবস্থানে রয়েছে।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিবগঞ্জের চৌকা সীমান্তে আন্তর্জাতিক শূন্যরেখার মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে। সেই রাস্তায় পাশে পুনরায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার সময় তৈরি হয় উত্তেজনা। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানায় সীমান্তে বাংলাদেশের ভূমি রক্ষায় স্থানীয় বাংলাদেশিরা। বিজিবির সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও দিনব্যাপী সীমান্তে অবস্থান করতে দেখা যায়। একইভাবে, ভারতীয় নাগরিকদেরও বিএসএফের সঙ্গে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ সময় সীমান্তসংলগ্ন দুই দেশের স্থানীয়রা পাল্টাপাল্টি স্লোগানও দেয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয় এবং বিজিবির সেক্টর কমান্ডারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সেখানে অবস্থান করছেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। তিনি জানান, সোমবার সকালে ভারতের মালদহ জেলার কালিয়াচক থানার সবদলপুর বিএসএফ কাম্পের সদস্যরা সীমান্তঘেঁষে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করলে বিজিবির পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়।
এরপর সোমবার বিকেলে উভয়পক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। বিজিবির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মঙ্গলবার আবারও বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করলে বিজিবি বাধা দেয়। এতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। উভয় বাহিনীই সর্তকাবস্থানে রয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত ইস্যুকে আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনাগুলো বরদাস্ত করা হবে না বলে ঢাকার পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। একাধিক অনুষ্ঠানে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্তে আর কোনো অবস্থাতে পিঠ দেখাবে না।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার ও কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন- দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় তোমরা প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দিবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, তোমরা আমাদেরকে হতাশ ও নিরাশ করবে না। জেনে রাখবে, তোমাদের দেয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে। তোমরাই হবে আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক।