লেখক: কল্লোল মোস্তফা
” বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদিদের অপপ্রচার ও বিক্ষোভ যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, তা বোঝা যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংখ্যা লঘুদের উপর ধারাবাহিক হামলার পরিসংখ্যানের দিকটা খেয়াল করলে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে হিন্দুদের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলার ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৬৭৮টি। হিন্দুদের বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ১ হাজার ৫৫৯টি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে ৪৪২টি।(৯ বছরে হিন্দুদের উপর ‘৩৬৭৯ হামলা’, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৮ অক্টোবর ২০২১)
আওয়ামী লীগ আমলে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর এই যে এত হামলা হলো, এ বিষয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদিদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? তারা কি তখন তারা বাংলাদেশের হাইকমিশনের উপর হামলা করেছিলো? বাংলাদেশে পেয়াজ আলু রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিলো? বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আহবান জানিয়েছিলো?
তাহলে এখন কি কারণে এসব করছে? এটা কি বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠির উপর ভালবাসা থেকে করছে নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করছে?
হাসিনা আমলে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে স্রেফ তিনদিনে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তেমন প্রতিক্রিয়া না হলেও এখন পশ্চিমবঙ্গের মন্দিরের ভিডিও দিয়ে বাংলাদেশে মন্দিরে হামলার অপপ্রচার করা কিংবা ঢাকা-আগারতলা-ঢাকা পথে শ্যামলি পরিবহনের মামুলি বাস দুর্ঘটনাকে ভারতীয় যাত্রীদের উপর হামলা বলে ত্রিপুরার মন্ত্রীর অপপ্রচার যে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতি ভালবাসা থেকে করা হচ্ছে না সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।
আসলে এ সব কিছুই করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরী করে ফায়দা হাসিলের জন্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। হাসিনার আমলে হিন্দুদের উপর হামলা হয়েছে বলে বর্তমান সময়ে কোন হামলা জায়েজ হয়ে যায় না। হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও সরকারের বিশেষ দ্বায়িত্ব হলো হিন্দুজনগোষ্ঠি সহ সকল সংখ্যালঘু ধর্ম ও জাতিসত্ত্বার ওপর হামলা শ্যূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের দ্বায়িত্ব হলো- ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যতধরণের অপপ্রচার হচ্ছে তার প্রতিটির সত্যতা যাচাই করে দেশী ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে তুলে ধরা। এজন্য সরকার “ইন্ডিয়া ওয়াচ” নামে একটি বিশেষ মনিটিরিং টিম তৈরী করতে পারে যারা দেশী বিদেশী ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্যাক্ট চেকারদের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরবে। সেই সাথে ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের বাইরে যেসব স্বাধীন মিডিয়া আছে তাদের সাথেও যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে যেন ভারতীয় মিডিয়াতেই ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের অপপ্রচার উন্মোচিত করা যায়।
এছাড়া ফেসবুক, এক্স সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের অপপ্রচারের জবাব দেয়ার জন্যও ডেডিকেটেড টিম তৈরী করতে হবে, যারা ঘৃণা ও অপপ্রচারের জবাবে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রচার করবে। পাশাপাশি ভারতে বিজেপির হিন্দুত্যবাদের বিরুদ্ধে যেসব সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন লড়ছে তাদের সাথে ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে হবে।”