প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আগামীতে বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার উত্থান হবে না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ধর্মের বিষয়ে বাংলাদেশের তরুণেরা খুবই পক্ষপাতহীন, তাঁরা দেশকে নতুন করে গড়তে চান।
গতকাল শুক্রবার ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ইকোনমিস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ইকোনমিস্টের বিদেশবিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক ফোলিস প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার নেন। বাংলাদেশ ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশ হওয়ায় শুরুতেই তিনি ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, ‘আমরা আনন্দিত, অত্যন্ত গর্বিত। সত্যিকার অর্থেই আমরা বড় একটি পরিবর্তন ঘটিয়েছি। ছাত্রদের কারণেই জুলাই অভ্যুত্থান ঘটেছে। তখন থেকে আমরা বলছি, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’
২০২৪ সালে ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচিত হওয়া বিশ্ব অঙ্গনে দেশের জন্য এক গর্বের বিষয়। গত ১২ মাসের মধ্যে যে দেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখিয়েছে, সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশকে এই খেতাব দেওয়া হয়েছে। ইকোনমিস্টের মূল্যায়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা। বাংলাদেশ বর্ষসেরা দেশের খেতাব পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে প্যাট্রিক ফোলিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে ইসলামী চরমপন্থা ফিরে আসার কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। তখন প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশে এই ধরনের কিছু ঘটতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে তরুণরা কতোটা শক্তিশালী।
‘আসুন, আমরা তরুণদের ওপর মনোযোগ দিই, বিশেষ করে তরুণীদের ওপর। বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে তরুণীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের যেকোনো তরুণের মতো তাঁরা (অভ্যুত্থানে) সামনের কাতারে ছিলেন। আমাদের তরুণ-তরুণীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং তাঁদের স্বপ্নগুলো যেন পূরণ হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত’ – বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশের তরুণেরা যোগ্যতার দিক থেকেও কোনো অংশ কম নন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিনজন তরুণকে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মন্ত্রিসভায়’ (ক্যাবিনেট) যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এখন ‘মন্ত্রিসভার’ সদস্য এবং অসাধারণ কাজ করছেন।
বাংলাদেশের নির্বাচনের পর কী করতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আসলে আমাকে আমার কাজ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। জোর করে এই কাজে আমাকে যুক্ত করা হয়েছে। আমি আমার কাজ করছিলাম, তা উপভোগ করছিলাম। এ কারণেই আমি প্যারিসে ছিলাম। আমাকে ভিন্ন কিছু করার জন্য প্যারিস থেকে সরিয়ে আনা হয়। সুতরাং আমার জীবনে সব সময় যে কাজ করেছি, উপভোগ করেছি, তাতে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব।’