সিরাজুল ইসলাম , সাংবাদিক
বাশার আসাদের প্রধান দোষ তিনি এরদোগান কিংবা আরব রাজতান্ত্রিক শাসকদের মত হতে পারেননি। তিনি ইসরাইল এবং অ্যামেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেননি।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে এত এত প্রচারণা, বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে এত হত্যার অভিযোগ, এত খুন এত নির্যাতন, এত অত্যাচারের অভিযোগ,,,এর পেছনে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি কাজ করেছে সেটা হচ্ছে পশ্চিমাদের বয়ান, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসরাইলের কূটকৌশল।
সিরিয়াবিরোধী প্রচারণা এবং কূটকৌশলের মূল কারণ হচ্ছে বাশার আল আসাদের বাবা হাফেজ আল আসাদ এবং এই বাসার আসাদ- তারা কেউ কখনো ইজরাইলকে মেনে নেননি, ইসরাইলের কাছে মাথা নত করেননি ইসরাইলকে কখনো স্বীকৃতি দিতে চাননি। বরং ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা নিজেদের অবস্থানে থেকে দুইদিন আগ পর্যন্ত লড়াই করে যাচ্ছিলেন।
সব সময় তারাই আপোষহীনভাবে লড়াই করেছে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের যত শক্তিশালী সংগঠন গড়ে উঠেছে তাদের সবাইকে এই সিরিয়ার বাসার আসাদ এবং তার বাবা হাফেজ আল আসাদ সহযোগিতা করে এসেছেন।
তাদের এটাই হল সবচেয়ে বড় দোষ (?) এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা ইজরাইলের এত হামলা এত ষড়যন্ত্র এবং তাদের এত এত বয়ান। আজকে বাংলাদেশে বসে যারা মধ্যপ্রাচের রাজনীতি কিছুই জানেন না তারাও বিশ্লেষণ দিচ্ছেন- বাশার আসাদ খুব খারাপ মানুষ এবং এই পরিবর্তনের পক্ষে খুব উল্লাস করছেন তারা ভিতরের খবর এবং পেছনের ইতিহাস কিছুই জানেন না। অহেতুক ছাগলের তিন নম্বরের বাচ্চার মতো লাফাচ্ছেন।
এখানে ইসরাইল এবং অ্যামেরিকার পাশাপাশি উগ্রবাদী ওহাবী সালাফীদের ভূমিকা রয়েছে এটাও মনে রাখবেন। আর ভূমিকা আছে ফেরেশতাতুল্য মুসলিম জাহানের উদীয়মান খলিফা এরদোগানের। কয়েকটা দিন যাক কাহিনী টের পাবেন। গতকালকেই খবর এসেছে ইসরাইল এরইমধ্যে সিরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে পড়েছে এবং বহু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে হামলা চালিয়েছে।
যারা হামাজ হিজবুল্লাহর জন্য জীবন দিতে চান তারা বুঝবেন এখন হামাস এবং হিজবুল্লাহর পরিস্থিতি কি হয়। সিরিয়া আসাদের কন্ট্রোল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের পুরো মানচিত্র এবং রাজনীতি পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এটা কেউ বুঝতেও পারছেন না। শুধু শুধু লাফাচ্ছেন, তুরস্কের এরদোগান জিন্দাবাদ দিচ্ছেন, ইনকিলাব জিন্দাবাদ দিচ্ছেন।
আসাদ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বললে খুব উল্লাস করছেন। দয়া করে বাস্তবতা একটু বোঝার চেষ্টা করুন। এত ঈমানী জজবা দেখিয়ে লাভ নেই, বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করেন। এখনো যারা হামাস এবং হিজবুল্লার জন্য ভীষণ গর্ববোধ করেন, যারা হামাস এবং হিজবুল্লার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত ছিলেন সেই হামাস এবং হিজবুল্লার পেছনে থেকে সবচেয়ে যে ব্যক্তি এই দুটি সংগঠনকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন তিনি হচ্ছেন বাসার আসাদ–খবর রাখেন কিছু? বাসার আসাদ মুসলিমস্বার্থের বিরোধী হলে কি প্রয়োজন ছিল এই হামাস এবং হিজবুল্লাহর মত সংগঠনকে সমর্থন দেয়ার? কি প্রয়োজন ছিল সামান্য পুঁজি সম্বল করে অ্যামেরিকা এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর? দয়া করে একটু মাথা খাটান, ঘিলু কাজে লাগান।
মনে রাখবেন, বাশার আসাদ যদি অ্যামেরিকা এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াতো তাহলে তিনি আজকে খুনী সন্ত্রাসী স্বৈরাচার বলে চিহ্নিত হতেন না। তিনি থাকতেন ধোয়া তুলসী পাতা হয়তো অনেকের মাথার মুকুট।
শুধু এরদোগান ইজরাইল এবং অ্যামেরিকার বন্ধু হতেন না আসাদও বন্ধু হতে পারতেন। কিন্তু তিনি এরদোগান কিংবা আরব রাজতান্ত্রিক শাসকদের মত এত আরাম শান্তির পথ বেছে নেননি। শুধু আবেগ দিয়ে, কথিত জজবা দিয়ে সবকিছু চলে না, বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করুন।