কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে খুব বাজেভাবে অপমান করা হয়েছে।গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল হাই কানু। তিনি যেনতেন মুক্তিযোদ্ধা নন, একাত্তারে সাহসিকতার জন্য পেয়েছেন বীর প্রতীক খেতাব। তার গলায় জুতার মালা পরানো মানতে পারছেন না কেউই। ঘটনার একটি ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও নজরে এসেছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউনূস।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আব্দুল হাই কানু। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তবে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে বিরোধ ছিল তার। ফলে আওয়ামী লীগের আমলেও অনেকটা এলাকাছাড়া ছিলেন তিনি।
আব্দুল হাই কানুর গলায় যারা জুতার মালা পরিয়েছেন তাদের অনেকে জামায়াত সমর্থক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জুতার মালা পরানোর নেতৃত্বে ছিলেন প্রবাসী আবুল হাসেম। প্রবাসী এই ব্যক্তি জামায়াতের সমর্থক বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে ছিলেন অহিদ, রাসেল, পলাশসহ ১০ থেকে ১২ জন। তারা কানুকে জুতার মালা পরিয়েই থামেননি। এলাকায় না আসারও হুমকি দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করেন। বিচার কার কাছে চাইব? মামলা দিয়ে আর কী হবে? তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতি করে। আমি আওয়ামী লীগ করলেও বিগত দিনে তাদের কোনো ক্ষতি করিনি। উল্টো আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম।
ঘটনার বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সাথে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ বিষয়ে আরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। জড়িতরা আমাদের কেউ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।