los_angels_ wildfires

হঠাৎ ভয়াবহ দাবানলের কবলে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেইট, চলতি মৌসুমে দ্বিতীয়বার। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বাতাসের বেগে মাত্র নয় ঘণ্টায় তিন হাজার একর এলাকা পুড়েছে আগুনে। বাতাসের গতি দ্বিগুণ হতে পারে বলে শঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ৩০ হাজার মানুষকে।

প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় ধেয়ে আসতে থাকা আগুনের আঁচ থেকে বাঁচতে রাস্তায় গাড়ি ফেলেই ছুটছে মানুষ। অ্যামেরিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় স্টেইট ক্যালিফোর্নিয়া চলতি মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো পড়েছে ভয়াবহ দাবানলের কবলে। শুধু লস অ্যাঞ্জেলেসেই মাত্র ১০ একর এলাকা থেকে মাত্র নয় ঘণ্টায় আগুন গ্রাস করে নিয়েছে তিন হাজার একর এলাকা।

আমি জীবনে এতো কাছ থেকে আগুন দেখিনি। গাড়িতে বসে দেখছি, মানুষজন গাড়ি ফেলে পালাচ্ছে, পাহাড় পুড়ছে, গাছ পুড়ছে, সবকিছু ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বাতাসের বেগে বিস্ফোরণের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। বছরের এ সময়ে নজিরবিহীন তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা।

স্যাটেলাইটেও ধরা পড়েছে দাবানলের ভয়াবহতা। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাতাস এমনই তীব্র থাকবে এবং বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে বলে শঙ্কা জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের।

অ্যামেরিকা লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার সার্ভিস বিভাগের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন বলেন, ‘আমরা বিপদমুক্ত হইনি। জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের শঙ্কা, বাতাস আরও বাড়বে এবং পরিস্থিতি খারাপ হবে। আজ রাত ১০টা থেকে আগামীকাল সকালে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বাতাস থাকবে। তাই ঝোপঝাড়, গাছপালার আশপাশে যারা থাকেন, তাদের প্রত্যেকের দাবানলবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।’

পরিস্থিতির ভয়াবহতায় লাল পতাকা সতর্কতা, অর্থাৎ চরম বিপদাপন্ন ক্যালিফোর্নিয়ার কোটি মানুষ। লস অ্যাঞ্জেলেসে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। আগুনের ঝুঁকিতে ১৩ হাজার ভবন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অর্ধলাখ মানুষ।

নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ৩০ হাজার মানুষকে। এক দিকে আগুন, তার ওপর কালো ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে থাকায় এলাকা ছাড়তে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছেন বাসিন্দারা। জরুরি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বের হওয়ার সময়টাও পাননি অনেকে।

রাস্তার যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এর কাছেই আক্ষরিক অর্থে আগুনের গোলক থেকে পোড়া জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ উড়ে এসে পড়ছে। দেখে মনে হয়েছে এখান থেকে আমাকে বের হতেই হবে। যা হারানোর তা হারাবোই, কিছু করার নেই।

হলিউড তারকাদের আবাসস্থল প্যাসিফিক প্যালিসেডসে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ এলাকা। এর মধ্যেই অ্যাঞ্জেলেস জাতীয় অরণ্যের কাছে আল্টাডিনা শহরেও ঝোপঝাড়ে লাগা আগুন রূপ নিয়েছে দাবানলে।

গেল কয়েক দশক ধরে অ্যামেরিকায় দাবানলের পরিসর, স্থায়িত্ব ও তীব্রতা বাড়ছে নাটকীয় মাত্রায়। বেশিরভাগ দাবানলের সূত্রপাতই মানবসৃষ্ট কারণে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ক্যালিফোর্নিয়া অনেক বেশি দাবানল-প্রবণ। স্টেইটটিতে দাবানলের মৌসুম বলে কিছু নেই, বরং পুরো বছরের দুর্যোগ এটি- বলেছেন ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর।

দ্য ক্যাম্প ফায়ার হিসেবে পরিচিত ২০১৮ এর দাবানল জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চল, যাতে প্রাণ যায় প্রায় ১শ’ মানুষের, পুড়ে ছাই হয় ১৮ হাজারের বেশি ভবন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here