বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ভারত ভয় দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সংখ্যালঘু বিশেষ করে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হচ্ছে- এই কথা বলে কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদেরকে ভয় পাই না।’
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গণ-আকাঙ্ক্ষা মঞ্চ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ফরিদা আক্তার এই মন্তব্য করেন। ভারতকে ভয় না পাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছি, সেই পরিবর্তন আমাদের সন্তানেরা করেছে। ভারতও আমাদের সেই গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে পারেনি। তাদের এই প্রোপাগান্ডাকে বাংলাদেশ ভয় পায় না। আমাদের সন্তানরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করেছে, যা কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি।’
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের পর প্রতিবেশী দুই দেশে সনাতনী ধর্মালম্বীদের বিক্ষোভের মধ্যে ভারতের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ক সংবাদ প্রচার বেড়ে যায়। এসব সংবাদে ব্যাপকহারে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশের প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে যেসব ভুয়া খবর প্রচার করা হয়েছে সেটির তালিকা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে হামলা, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বিক্ষোভ ও বাংলাদেশের পতাকায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা শুধু সেনাবাহিনীর কাজ নয় প্রত্যেকের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছাত্র-শ্রমিক-জনতা-কৃষকদের অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার বা সংবিধান পুনর্লিখন হোক-তা যেন জনগণের জন্য হয়। এমন সংবিধান হতে হবে যেখানে দেশের মানুষের সাম্য ও মর্যাদার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আপনাদের প্রতি অন্যায়-অবিচার হোক সরকার তা কোনোভাবেই চাইবে না। আপনাদের সন্তানের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখনও অনেক আহত শহীদে পরিণত হচ্ছে, শহীদদের তালিকা বাড়ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিয়েছে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘নির্বাচিত হয়ে যারা সরকার গঠন করবে, তারা যেন ক্ষমতা নয় বরং দায়িত্ব পালন করে- এ ধরনের বার্তা রাজনৈতিক দলগুলোকে দিতে হবে। ধর্মীয় পরিচয়ে বিভাজন করা এটা মোটেও কাম্য নয়, আমাদের দরকার মানুষের পরিচয়।’
গণ-আকাঙ্ক্ষা, গণ-অভ্যুত্থান প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা’-শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গণ-আকাঙ্ক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর। বক্তব্য রাখেন- রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার।