ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বিএনপি আর জামায়াতের মধ্যকার বিরোধ দিন দিন প্রখর হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ইস্যুতে দল দুটির অবস্থান সম্পুর্ণ বিপরীত। এবার নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে তারা। বিএনপি বলছে, নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার জন্য বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের দরকার নেই। বাড়ি বাড়ি গেলে ভোটার তালিকা প্রণয়ন সময় বেশি লাগবে।
নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান জামায়াতে ইসলামীর। নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে আশঙ্কায় বিএনপি বিরোধিতা করলেও, জামায়াতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ চায়। আগামী নির্বাচনে আসন পুনর্বিন্যাসও চায় দলটি।
এ বিষয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পরপর তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে মানুষ ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। অসংখ্য যুবক-যুবতীর বয়স হয়েছে ভোটার হওয়ার। তারাও ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনের প্রতি তাদের আস্থা ফেরাতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এজন্য আমরা যৌক্তিক সময় দেওয়ার পক্ষে।
বুধবার রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে ভোটার তালিকা প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান। তার পরিষ্কার বক্তব্য, ভোটার তালিকা হালনাগাদে দীর্ঘ নয়, যৌক্তিক সময় দেওয়ার পক্ষে তিনি। প্রবাসীরা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সমান তালে করেছেন। তাদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জামায়াত আমির বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে কাউকে না কাউকে দেশের দায়িত্ব নিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন। এর জন্য একটি রোডম্যাপ দিন। সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিএনপির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিটি।
সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, সত্যিকার অর্থে একটি সঠিক ভোটার তালিকা চান তাঁরা। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, অপ্রয়োজনীয় এবং তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা আপগ্রেডের কাজটি করা হলে তা অবশ্যই নির্ভুল হবে।
ভোটার তালিকা নিয়ে এমন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপি আবারও নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তাড়াহুড়োর পরিচয় দিল। ৫ আগস্টের পর থেকেই দলটি নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতের অবস্থান ভিন্ন। তারা নির্বাচন আয়োজনের জন্যও ড. ইউনূস সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার পক্ষে।