লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। নিখোঁজ রয়েছেন আরো অন্তত ১৬ জন। দুটি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও এখনও লস অ্যাঞ্জেলেসের ইটন, হার্স্ট এবং প্যালিসেডের দাবানল নেভাতে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে।
এরইমধ্যে আগুনে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেক অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির সুপারভাইজার লিন্ডসে হরভাথ বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে ১২ হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিটি রাত কাটছে অকল্পনীয় আতঙ্ক আর ভয়ে।’
এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ক্যাফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম জানিয়েছেন, এই দাবানল অ্যামেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে।
তিনি বলেছেন, এই আগুন নেভাতে গিয়ে যা খরচ হচ্ছে এবং যে পরিমাণ চেষ্টা করতে হচ্ছে, তা আগে কখনো হয়নি।

গভর্নর জানিয়েছেন, পুড়ে যাওয়া শহরকে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ২.০ গড়ে তোলার জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার দমকল কর্মকর্তা টড হপকিন্স জানান, দাবানলের আগুন এখন ব্রেন্টউডে চলে যেতে পারে। এই বিলাসবহুল এলাকায় অনেক বিখ্যাত মানুষের বাস। গেটি সেন্টার ও এইসিএলএ ক্যাম্পাসও কাছেই।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, এবার ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ফলে আগুন আরো কয়েকদিন ধরে জ্বলবে। অন্তত চলতি সপ্তাহের বুধবার পর্যন্ত তা জ্বলবে বলে জানানো হয়েছে। আরো নতুন এলাকা দাবানলের গ্রাসে পড়তে পারে।
চলতি সপ্তোহেও দাবানল সক্রিয় থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। এতে করে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যু আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাসিন্দাদের। আগামী দিনগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আগুনের ছোবল থেকে দূরে থাকা টোপাঙ্গাসহ অন্যান্য এলাকার মানুষ।
অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তা জানান, ধোঁয়া পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তার মধ্যে গ্যাস, বাস্প ও ছোট কণা আছে। ওই ছোট কণা নাক ও গলায় গিয়ে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। বায়ুদূষণ প্রবল মাত্রায় হচ্ছে। তাই মানুষ যেনো ঘরে থাকেন।
এদিকে দাবানলের মধ্যে কারফিউ অমান্য করা, অগ্নিকাণ্ড সম্পৃক্ততার অভিযোগ, লুটপাট ও মাদকসহ নানা অপরাধমূল কর্মকাণ্ডের জন্য লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দাবানলের সুযোগে কেউ অপরাধ বা প্রতারণার সাথে জড়িত হলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শেরিফ রবার্ট জি. লুনা বলেন, ‘দাবানলের সুযোগে এই এলাকায় কেউ কোনো ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ করতে আসবেন না। ইতিমধ্যে যারা অন্যের জিনিসপত্র চুরি, লুটপাট বা অন্য যেকোনো অপরাধ তারা সাবধান হয়ে যান। অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা প্রতারণার সাথে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না।’