ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে বিনোদন জগতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেস। আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলছে সবকিছু। চারপাশে সাইরেনের শব্দ। এ দাবানলের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার থেকে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে ছয়টি আলাদা দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। আবার এর মধ্যে শুরু হয়েছে প্রচণ্ডগতিতে বয়ে চলা ঝড়। ঝড়ো বাতাসে হুহু করে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন।
দাবানলে এখন পর্যন্ত দশজনের মৃত্যু হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বহুমূল্যের ঘর ও গাড়ি। এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের কয়েক হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের ভয়াবহতা স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতেও স্পষ্ট হয়েছে। স্থানীয় কেটিএলএ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে এলাকার পর এলাকা। হঠাৎ করে ধোঁয়া ভেদ করে বেরিয়ে আসছে আগুনের শিখা। অর্থাৎ নতুন কোনো বাড়িতে আগুন লেগেছে।
আগুনে এখন পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে শতকোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৩ লাখ ১১ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দাবানলে এখন পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার।
অ্যাকুওয়েদারের প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেন, সামনের দিনগুলোতে আরও অবকাঠামো আগুনে পুড়ে যেতে পারে। এমনটি হলে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক দিয়ে এই দাবানল ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হতে যাচ্ছে। এই আগুনের ফলে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, লোকজন চাকরি হারাবে, আর ধোঁয়ার প্রভাবে চিকিৎসা খরচ বাড়বে।
জে পি মরগ্যানের বরাত দিয়ে এনবিসি নিউয জানায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়ির মালিকরা ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোর লজিক জানায়, দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৪৫৬ হাজার বাড়ির মেরামতে ৩০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।
এদিকে দাবানলে বিপর্যস্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে লুটপাটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বোর্ড অব সুপারভাইজারসের প্রধান ক্যাথরিন বার্জার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। দুর্বৃত্তরা পরিত্যক্ত ওই বাড়িগুলোয় লুটপাট চালাচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওপর দিকে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের। লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন নেভাতে অ্যামেরিকার আরও ছয় স্টেইট থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ২৫০টি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং ১ হাজার সদস্য দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় গেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির পাশাপাশি হেলিকপ্টারও আগুন নেভানোর কাজে মাঠে নেমেছে। অ্যান্থনি ম্যারন বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করছি। তবে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের সব বিভাগ মিলেও এই আগুন নেভানোর মতো যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী নেই।
এদিকে আবার আগুন নেভানোর কাজে নতুন করে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে ক্যালিফোর্নিয়ায় বৃষ্টি হয়নি। ফলে প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকার কিছু হাইড্রেন্ট শুকিয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জেনিস কুইনোনেস বলেন, শহুরে পানি সরবরাহব্যবস্থা দিয়ে দাবানল নেভাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সরকার অযোগ্য। এই পানিসংকটের কারণে আগুন নেভানোয় বাধা আসছে। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগুন নেভাতে যা যা দরকার সব করবে সরকার।