জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ২৫টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। এই পরিষদ জনপ্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেছে এবং বলেছে যে সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো এই বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার সেগুনবাগিচার পূর্ত ভবনে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের নেতাদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ২৫টি ক্যাডারের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে এর প্রতিবাদে বিবৃতি প্রদান, কলম বিরতি, মানববন্ধন ও কেন্দ্রীয় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।

প্রসঙ্গত, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করার সুপারিশের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দাবি হচ্ছে- উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোন কোটা থাকবে না, পঞ্চম গ্রেডের সবাই গাড়ির ঋণের সুবিধা পাবে, পদসৃজন, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া যেসব বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি, অতি দ্রুত সেখানে সমাবেশ আয়োজন এবং জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো হবে। ৪ জানুয়ারি (শনিবার) ঢাকায় সমাবেশ আয়োজন করা হবে এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া নেওয়া খসড়া সুপারিশের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। 

সভায় বক্তারা বলেন, কমিশন বৈষম্যমূলকভাবে উপসচিব পুলে একটি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করায় সিভিল সার্ভিসের অন্য ২৫ ক্যাডারের সব সদস্যের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের এ সব সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে একটি গ্রুপ এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচার শুরু করেছে। সিনিয়র সার্ভিস পুল বা উপ-সচিব পুলের পদগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের নয়। ‘সার্ভিস অ্যাক্ট, ১৯৭৫’ অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার। এছাড়া ২০১৮ এর নির্বাচনের পর সার্ভিস অ্যাক্ট বাতিল করে ২০২৪ এর নির্বাচনের পর এসব পদ নিজেদের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডার, যা মেধাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগঠনে মারাত্মক অন্তরায়।

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘সভায় বক্তারা বলেন, সিভিল সার্ভিসের কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়িত হবেন। বর্তমানে প্রতিটি সেক্টরে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা যারা সেই সেক্টর সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ। ফলে সেক্টরগুলো কাঙ্ক্ষিত জনসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। তাছাড়া সব সেক্টরে একটি ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেট, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বৈষম্য রাষ্ট্রের সকল সেক্টরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষ প্রকৃত জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

আরও বলা হয়েছে, ‘জনবান্ধব সরকারের পরিবর্তে দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকার। কমিশন কর্তৃক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করতে চাওয়া জনমনে নতুন সন্দেহের উদ্রেক করেছে। কমিশনের এ সকল সিদ্ধান্ত সিভিল সার্ভিসের মধ্যে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে। বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি বলে জোর দাবি করেন বক্তারা।’

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ২৫টি ক্যাডারের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here