মধ্যরাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এ ঘটনার পর ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের তিন তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বলেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেতা লিখেছেন, সাবধান করার সময় আর নাই। নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম ভাই, বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন। পুরো বাংলাদেশে আপনাদের সঙ্গে আছে। সারজিস আলম লিখেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনে যেসব চাটার দল এখনো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে তাদের শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে।
বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ, এমন দাবি করে সারজিস বলেন, এদের উপর ভর দিয়েই হাসিনা এ দেশে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিল।
প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর সচিবালয় এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মী একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ভবনের অনেকখানি পুড়ে গেছে আগুনে। ভেতরে বিদ্যুৎ নেই। পোড়া গন্ধ ভাসছে। দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ। আমরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বেরিয়ে এলাম।’
সচিবালয়ে প্রবেশের পাঁচটি প্রবেশমুখেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। ভেতরে কেউ ঢুকলেই করতে হচ্ছে জবাবদিহি। আর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।