নানা কারণে বিভিন্নমুখী সমালোচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তাকে রোস্ট করে ইউটিউব ও ফেসবুকে একের পর এক ভিডিও ছাড়ছেন ইলিয়াস হোসেন ও পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো বিদেশে থাকা অ্যাক্টিভিস্টরা। সেসব কন্টেন্টে আসিফ নজরুলের শীলা আহমেদকে নিয়েও খোঁচা দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে মুখ না খুললেও এক আলোচনাসভায় স্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে আবেগতাড়িত হয়ে কাঁদলেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে নিজের লেখা উপন্যাস ‘আমি আবু বকর’ নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আসিফ নজরুল। এ সময় স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসিফ নজরুল বলেন- আমি কিন্তু মাঝেমাঝে মন খারাপ করে আমার স্ত্রীকে বলি, আমার কী কোনোদিন এই জীবন আসবে, যেদিন কিছু করতে হবে না। কিছুই চিন্তা করতে হবে না আমার। আমি শুধু ঘুমাবো আর লিখব আর লিখব। তো আমার স্ত্রী বলছে অবশ্যই আসবে।
স্ত্রী শখ করে কফি বানানো শিখছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন- ও বলছে আমি কফির দোকান দেব তুমি শুধু লিখবা আর লিখবা। আমার লেখালেখির মাঝখানে প্রায় ১৫ বছর গ্যাপ ছিল। আমি যে ১৫ বছর পর লিখতে পেরেছি এটা আমার স্ত্রীর জন্য। আমি ওর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। সবার সামনে বললাম ধন্যবাদ।
বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সময়ে দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের পরিস্থিতিও তুলে ধরেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন- আমার দুঃখ লাগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু সে একজন বড় সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার পর, সে আমাকে বলল আমি আর তোকে ফোন করব না তুইও আর আমাকে ফোন করবি না। এমনকি তার মেয়ের বিয়েতে, যে মেয়েকে আমি ছোট বেলায় কোলে নিয়েছি তার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিল না। দাওয়াত দিল আমাদের ক্লাসমেট এক ছাত্রলীগ নেতাকে। যার সঙ্গে কোনোদিন আমাদের কোনোরকম ফ্রেন্ডশিপ ছিল না। আমার কাছে তখন মনে হতো আমাকে যদি তার বিয়েতে দাওয়াত দিত তাহলে কী তার চাকরি চলে যেত?
আওয়ামী লীগের আমলে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতেন বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, শিবির ট্যাগ লিখতে পারে এই ভয়ে কেউ প্রোগ্রামে আসত না। একমাত্র আমি আসতাম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শিবিরের টিচার ছিল তারাও আসত না। একজনও আসত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতপন্থী হওয়ার কারণে যারা ভিসি হয়েছেন তাদের একজনও আসতেন না, প্রত্যেকের নাম জানি। আসিফ নজরুল বলেন, সর্বশেষ ঘটনা। রোজার মধ্যে কোরআন শরীফ পড়ানোর অপরাধে কতগুলো ছাত্রকে টেনে নিয়ে পিটালো ছাত্রলীগ। আমি একমাত্র শিক্ষক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
নিজের লেখা উপন্যাসটি রচনার প্রেক্ষাপট ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন- গত ১৫ বছরে আমরা যে নারকীয় শাসন সহ্য করেছি, এটার পেছনে আমাদের কালেক্টিভ কাপুরুষতা ছিল। জানি না, আমরা কি পাপ করেছিলাম, যে দেশে শেখ হাসিনার মতো একটা শাসক পেয়েছিলাম। তিনি আমাদের সমস্ত সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়েছিলেন। ট্যাগের রাজনীতি দিয়ে মানুষকে ভিক্টিমাইজ করার আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আমরা ঘৃণা করতাম। সেটা আমরা এখনো করে চলেছি।
আসিফ নজরুল জানান, বিগত সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সন্দেহ করে নয়, বরং নিশ্চিতভাবে জেনে বুঝেই অনেক ছাত্রকে মিথ্যাভাবে শিবির ট্যাগ দেওয়া হতো। তিনি বলেন, তারা জানতো এ ছেলেটা শিবির না, ছাত্রদল না; তা সত্ত্বেও তার ল্যাপটপটা নেওয়ার জন্য, বিনোদন করার জন্য, নিজেকে আরও বড় লিডার বানানোর জন্য বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা হতো। গত ১৫ বছরের এই সমস্ত ব্যাধি থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। শেখ হাসিনার সরকারের দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে আমরা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মুক্তি পেয়েছি।